বাবুই পাখির রাফখাতা
পথ সবসময় মাটিতে শুয়ে থাকে না
মাঝেমধ্যে পথ উঠে যায় আকাশের দিকে
আকাশের দিকে উঠে গেলে পথকে আমরা আর পথ বলি না,
নাম দিই গম্ভীর অয়োময় অট্টালিকা প্রাসাদ
নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার
চীনের সাংহাই বাণিজ্য টাওয়ার,
বাবুই পাখিরা অট্টালিকার ফোকর জুড়ে ঘোরে দিগন্তের নালিতা শাক
আর গমের ও ধানের দানা নসিবে মাখে বাকুম বাকুম নাচের মুদ্রায় তোলে,
বাবুইদের সবক দেয় ওয়াল স্ট্রিট-দেখো
কতো পাকা জমিনে পাকা উঁচু কুলীন দালান
মতিঝিলের দিলকুশার বহুজাতিক সিটি সেন্টার ঢাকা,
অথচ তোমাদের বসতভিটা সামান্য হাওয়ায় নড়বড়
এসো সভ্যতার মহিমা রাত্রির পথে নিজের ঘর করে নাও
অনড় ও সুউচ্চ দালান পাহাড়।
বাবুই বলে, আমার ঘর হাওয়ায় নড়েচড়ে
ঝড়ে ভেঙে পড়ে- এটুকুই আমার গৌরব।
শঙ্কা ও দাপটের মুখে ডাকি দয়ালের নাম,
জাপটেধরি আমার বন্ধুর ভয়ার্ত পাখা- মরি একসাথে
আবার ভাঙা নড়বড়ে ঘরের খোঁজে নিরুদ্দেশে উড়ি
অপার স্থপতি বাবুই পাখি হাওয়ায় বানায় বাড়ি।।
আমার বাবা গোরখোদককে বলে
আমার বাবা মারা গ্যাছেন কতোদিন কতো বছর হয়
সে আজ এতোকাল পরে ভুলেই গ্যাছি
সেই মৃত্যু কোন আলোড়ন তোলেনি
বৈঠার আঘাত জলে আলোড়ন তোলে-
নৌকো তরতরিয়ে এগোয়
আমাদের বাবার মৃত্যু কোন আলোড়ন তোলেনি
কিন্তু আমার মৃত্যুর মুখে, আমার চলে যাবার আগ মুহূর্তে
আমার মৃত বাবা ট্যাঁটার মুখে পড়া বোয়ালমাছ-
পানির নিচে বাতাসের সিন্দুকে কী যে আলোড়ন তোলে
গোরখোদককে বাবা বলে, আমি জানি কীভাবে কবরে থাকতে হয়
ওকে নয়, আমাকে আবার গোরে নামাও
ও শিশু, শিশু একটি- কেন ভাবো ও বড় হয়েছে
কবরে নামার মত বড় হয়েছে?
ও শিশু, চিরদিন ওর মায়ের কোলে শিশুটি আমার
আমাকে কবরে নামাও, আগে আমাকে রাখো গোরে মাটির নরমে।
ভ্যান গঁগের ব্রাশ
সবাই ঘুমায়, একটি জবাফুল জেগে থাকে।
ইউক্রেন নির্ঘুম, তার সাথে নির্ঘুম তুমি।
তা-ও কম কিসে- একটি অছিলায়
ফিলিস্তিনের অন্যায়ের মীমাংসার সঙ্গে তুমি জেগে আছো।
যে ফাঁসি কাষ্ঠের দিকে এগোয়- সে কী কখনও ঘুমাতে পারে?
একটাই তো যুদ্ধ দুনিয়ায়- জেগে থাকা আর ঘুমিয়ে পড়ার যুদ্ধ।
তুমি একটি রোদে ভেজা ছায়ার মোহনায় প্রাগৈতিহাসিক বাসনার
ঘন্টাধ্বনি বেদনায় অপেক্ষায় তমসার মোম ঝরে
রূপকথার তিনটি ময়ূর পেন্সিলে তুমি আঁকো
ভ্যান গঁগের সুতীব্র ব্রাশের পোঁচে ক্ষরণ জেগে থাকো।